Comments


শিক্ষার উন্নয়নেই জাতির অগ্রগতি


দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজ করছে নানা সমস্যা। স্কুল থেকে শুরু করে
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়ার উল্লেখযোগ্য মানোন্নয়ন নেই। শিক্ষার নামে
চলছে বাণিজ্য। ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি, পাঠাভ্যাসে অমনোযোগিতা,
শিক্ষকের পাঠদানে নিরুৎসাহ, শ্রেণীকক্ষের বাইরে প্রাইভেট পড়ানো- এ সবই
শিক্ষা বিস্তারের অন্তরায়।


কোচিং সেন্টারগুলো দখল করে নিয়েছে শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক শিক্ষা
কার্যক্রম। চলছে অনিয়ম, অরাজকতা। এক সময় দেখা দিয়েছিল নকলের মহামারী।
বর্তমানে নকলপ্রবণতা কমে গেলেও শুরু হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ছড়াছড়ি।
শিক্ষাঙ্গনে চলছে মারামারি, হানাহানি, দখল, টেন্ডার-বাণিজ্য, শিক্ষক
দলাদলি। শিক্ষা ক্ষেত্রে অবনতিশীল পরিবেশের অন্যতম কারণ শ্রেণীকক্ষে
শিক্ষকের পাঠদানে অবহেলা।


অনেক শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তারা নিজ বাড়িতে,
এমনকি স্কুলে বসেই শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান বাড়তি অর্থের বিনিময়ে, কখনও
বা নির্ধারিত ক্লাস বাদ দিয়েই।


কোচিং সেন্টারগুলোর সঙ্গে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
শিক্ষকতাকে তারা নিচ্ছেন একটি লাভজনক বাণিজ্য হিসেবে। অভিভাবকরা হয়ে পড়েছেন
জিম্মি। বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে কোচিং সেন্টারের
সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও
বাইরে পার্টটাইম কাজের অভিযোগ রয়েছে।


দেশের মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিংহভাগই বেসরকারি কলেজ, যা গভর্নিং বডি
দ্বারা পরিচালিত। অনেক ক্ষেত্রে গভর্নিং বডির কার্যকলাপের ওপর সরকারি
পর্যায়ে তেমন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বেসরকারি কলেজের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে
প্রার্থীর সত্যিকার যোগ্যতা ও মেধা সব সময় যাচাই করা হয় না।


মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষার ফলেও এর নেতিবাচক
প্রভাব পড়ে। দেখা যায়, স্নাতক পরীক্ষায় পাসের হার খুব কম সময়ই পঞ্চাশের
উপরে ওঠে। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীই পাবলিক পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ হতে পারে না। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের
পর অনেক শিক্ষার্থীর জীবনে আর কখনও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করা সম্ভব হয়ে ওঠে
না।


শিক্ষাঙ্গনের অবকাঠামোগত মানোন্নয়ন ঘটেছে যথেষ্ট। যুক্ত হয়েছে অনেক
প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা। তারপরও শিক্ষায়তনে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত
হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি নিয়ে
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি।



একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে সঠিক পাঠদান থেকে বিরত থেকে তার দায়িত্বের
প্রতি উদাসীন থাকবেন, শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াবেন, এটা কোনোমতেই মেনে
নেয়া যায় না। সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একজন শিক্ষক ন্যায়নিষ্ঠভাবে তার ওপর
অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন, শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন,
এটাই কাম্য। শিক্ষকের আদর্শেই গড়ে উঠবে শিক্ষার্থীর আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।
শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্যও তাই।


এ ব্যাপারে সন্তানের মা-বাবা, অভিভাবকদের রয়েছে অপরিসীম দায়িত্ব।
তাদেরকে সন্তানের লেখাপড়ার বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে, দিতে হবে পর্যাপ্ত সময়।
ঘরে বসে নিজের সাধ্যমতো লেখাপড়া শেখাতে হবে। শুধু স্কুল বা গৃহশিক্ষক,
কোচিং সেন্টারের ওপর সন্তানকে গড়ে তোলার দায় চাপিয়ে নিজেরা নিশ্চুপ বসে
থাকলে চলবে না।


শিক্ষা ক্ষেত্রে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরাজমান সব
অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদের দিতে হবে বিষয়ভিত্তিক উচ্চতর
শিক্ষা ও উন্নত প্রশিক্ষণ। শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাসে সঠিক পাঠদান
প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে নিশ্চিত করতে হবে।


এসব দেখভালের জন্য কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। প্রতিটি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক
সরবরাহ করতে হবে। থাকতে হবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি।


মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ : প্রাবন্ধিক ও গল্পকার

Post a Comment

0 Comments